ভালবাসা ছাড়া জীবন শূন্য,তাই ভালবাসা দিয়ে জয় করতে চাই এই ভুবন।

শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

দৃষ্টি শক্তি বদলান, সমাজ বদলে যাবে।

জি, আমরা দুই বোন। না, আমাদের বা আমাদের বাবামায়ের ছেলেসন্তানের অভাব বোধ হয় না।

আমি আমার বাবা মার  দ্বিতীয় কন্যা সন্তান এবং সর্বকনিষ্ঠ।ছোটবেলা থেকে যেখানেই গেছি সবার মুখেই একটা  প্রশ্ন শুনে শুনে কানটা  পচে গেছে প্রায়!''তোমার ভাই নাই?''।আর আমার আম্মুর আমার থেকেও বেশী শুনতে হয়েছে নিঃসন্দেহে।''ছেলে নেই!'' আবার দেখো একটা  ছেলে হয় কিনা!প্রকৃতপক্ষে, আমার আম্মু বা আব্বু কে কখনই এই নিয়ে কোন আফসোস  করতে বা কষ্ট পেতে দেখিনি।বরং আমার ধারনা আশেপাশের মানুষরাই বেশি চিন্তিত এই ব্যপারে।ছেলে হলে যেন তাদের চিন্তা দূর হয়।তারা আর এই দুঃচিন্তা নিতেই পারছেনা!বিষয়টা অনেক টা  এমন যেন  ছেলে হলে সেই বাবা মা সার্থক!সন্তানের মধ্যে কি আসলেই ভেদাভেদ সম্ভব?
ছোট থেকে একটা কথা অনেক শুনেছি।আমার জন্মের পর নাকি আমার বাবা আমকে দেখতেই যায় নি আবার মেয়ে হয়েছে বলে।কথা টা আমার বাবার কাছে জানতে চাইলে বিষয় তা সম্পর্কে আমার ভুল ধারণা ভাঙ্গে  ।আমি অবাক হই একটা শিশু কে কষ্ট  দিয়ে না জানি কি আনন্দ!আব্বু আম্মু তাদের ছেলে কে যেভাবে মানুষ করতো তার কোনো অংশ কম ভাবে আমদেরকে মানুষ করেছে বলে মনে হয় না।বরং আমাদের সবসময় শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ভেদাভেদহীনতার। এখনো কেন আমাদের সমাজে ছেলে বংশের প্রদীপ, সে বংশের ধারা বজায় রাখবে  এইসব কথা ভাবা হয় জানি না।

পরিচিত সহপাঠী, বান্ধবী অনেক কেই দেখেছি কলেজে ওঠার আগে বা পরেই বিয়ে দিয়ে দিতে।হয়ত সেই মেয়ে টা পড়া লেখা করে অনেক দূর যেতে  পারত।কোথায় তারা তাদের ছেলে কে তো সেই বয়সে বিয়ে দিলো না।এই দোষ টা কাকে দিব?তাদেরকে নাকি সমাজ কে?

আমার বাবা মাকে এমন সুপরামর্শ যে কেউ দেয়নি তেমন  না।বরং ভবিষ্যৎ এ ভালো ছেলে পাওয়া যাবেনা এমন কথা তাদের কে বার বার বলা হয়েছে আমাদেরই সামনে।আর তাদের স্পষ্ট জবাব বারবারই আমাকে মুগ্ধ করেছে।আর আল্লাহতালার দেওয়া সবচেয়ে ভালো উপহার বাবামাকেই  মনে হয়েছে।আমার আব্বুকে সব সময় বলতে শুনেছি চাকরি পাওয়ার আগে বিয়ে না।সে যত ভালো ছেলেই হোক।আব্বু সব সময় আমদের আত্মনির্ভরশীল করতে চেয়েছে।পশ্চাৎপদ কোনো মানসিকতা তার মধ্যে দেখিনি।আমিও তাই সব সময় আব্বুকেই অনুসরণ করেছি।তার মতই হতে চেয়েছি।

আমার বড় বোন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে কুয়েট থেকে।এক আন্টি একবার আমার সামনে আম্মুকে বলল তোমার মেয়ে যে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে অনেক বড় কিছু হবে তা কি তুমি নিশ্চিত?তার থেকে ভালো ছেলে পেলে বিয়ে দিয়ে দাও।উল্লেখ্য, আন্টির ছেলেও ইঞ্জিনিয়ার। তিনি তার ছেলের ক্ষেত্রে কেন একই ধারণার পোষণ করলেন না?খুব শুনতে ইচ্ছা হচ্ছিল।কিন্তুু সেইটা জানতে চাইলে যে আমার গায়ে বেয়াদব  এর তকমা যুক্ত হওয়া ছাড়া কিছুই হবে না তা আমার জানা ছিল।

আমাকে আমার আপু কে অনেক বার এই কথা টা শুনতে  হয়েছে তোমার খারাপ লাগে না ভাই নাই বলে?!ভাই নাই তাতে খারাপ লাগার কি হলো আমি সেইটাই বুঝিনা।না আমার ভাই নেই।আর আমার এইটা নিয়ে কোনদিন খারাপ লাগা কাজ করেনি উলটো আমার উপলব্ধি সহোদর হিসেবে ভাই না বোনই শ্রেষ্ঠ।

বাসা ছেড়ে ঢাকা এসেছি পড়তে।এখানেও তাদের সমস্যা! একা মেয়েকে ঢাকার মত একটা জায়গায় পাঠানো টা কি ঠিক?! আম্মু আব্বু কখনো তার মেয়ে যাবে নাকি ছেলে এইগুলা ভাবেইনি।তারা আমাকে সম্পূর্ণ সুযোগ দিয়েছে যেন আমি আমার   স্বপ্নকে পুরন করতে পারি।তাই আমিও কখনও অন্যের কথা শুনে নিজের স্বপ্নকে ভুলে যাইনি।
আমি গর্বিত এমন বাবা মা পেয়ে।যারা সন্তানকে সন্তান হিসেবেই দেখেছে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে না। আর বাবা মাকে গর্বিত করতে যে ছেলে হয়ে জন্মাতে হয় না সেইটাও সবার জানা উচিত।দরকার শুধু ভালো মানুষ হওয়া।একটা শিশু যখন জন্মায় তখন সে বংশের প্রদীপ হচ্ছে  নাকি এইটা সে জেনে আসে না।তাকে জানাই আমরাই। তাকে ইনফেরিওর বা সুপিরিওর এর অনুভুতিও আমরাই দিই।এই ধারণা তাকে কখনো না দিয়ে তার পরিবর্তে সে যে তার বাবা মার সমাজের দেশের অমূল্য সম্পদ এই ধারণা টা দিলে হয়ত মন্দ হবে না।তাহলে হয়ত আর কোনো ট্যালেন্টড মেয়েকে ইন্সপিরেশন আর কনফিডেন্সের অভাবে হারাতে হবে না।

জান্নাতুল কানন এশা
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

#P2Pchallenge #ThinkSpeakChange
#ChangeisYou  #Rise2change #MoveOn
#ChallengingExtremism #NohateKnowLove

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন